উমাপদ কর

কত যে পাখির নাম

উমাপদ কর





প্রতিটি বাংলামাসের নাম এক-একটা চেনাজানা পাখির নামে বদলে দিলে আমরা কী-কী যুক্তি-তর্ক, বাদানুবাদ ও বিশ্লেষনে জড়িয়ে পড়তে পারি দেখা যাক—

‘পরীক্ষা প্রার্থনীয় আদালত’-এর কার্যক্রম।

বিচারপতিঃ আপনারা সকলেই অবগত আছেন আমাদের উদ্দেশ্য এবং বিধেয় ঠিক কী! প্রয়োজনে আমি আবার স্মরণ করিয়ে দেব যথাসময়ে। এক্ষণে শুরু করা যাক বৈশাখ মাস দিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই আমি ১ম বা সংখ্যাগুরু পক্ষকে নাম প্রস্তাবের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

১ম ও সংখ্যাগুরু পক্ষঃ ধন্যবাদ মি লর্ড। বৈশাখ = কাক।

২য় পক্ষ— লে যা! ফার্স্টেই কাকের নাম? ডাক-টা শুনেছেন? কেমন কর্কশ, নোংরাঘাটা একটা মাল হবে বৈশাখের রিপ্রেজেন্টিটিভ? বৈশাখ হলো গিয়ে একটা শুভ নতুন বছরের প্রথম মাস। একটা শুভাশুভ জ্ঞান কাজ করবে না, বাছাইয়ে? 

১ম পক্ষ— ঠিক। পয়েন্ট-টা নোট করার মতো। প্রথমত ডাক— কর্কশ। তো কর্কশই-তো চাই। বৈশাখের খরতা বোঝাতে গেলে কর্কশ বাজখাই হবে না তো মধুকণ্ঠী হবে? নিদেন অম্লও চলবে না স্বরে। খ্যাসখ্যাসে গলা বলেই বৈশাখের সঙ্গে যায়। আর শুভাশুভ? কাকের ডাকেই তো ঘুম ভাঙে; কাক দেখে ভোর হয়। এটা নিত্যদিন। তাহলে সবদিনই কি অশুভ যায় নাকি মশাই!

২য় পক্ষ— শহরে থেকে থেকে আপনাদের কাক ছাড়া গতি নেই। গাঁয়ে কাকের গলা ছাড়াও অন্যসব পাখির ডাক শুনে মানুষের ঘুম ভাঙে। তারা গাঁয়ে শালিখ দেখে ভোর করে। কাক তো মুদ্দাফরাস। তো, একটা নাপিত থাকবে সবার আগে? লাও ঠ্যালা।

১ম পক্ষ— ঠিক ঠিক। তিন ঠিক। গাঁয়েও অন্যান্যদের সঙ্গে কাক ডাকে। তাহলে কাক-টা কমন। কিনা? শালিক আমরাও দেখি। কিন্তু কম। জোড়ায়-জোড়ায় তো দেখতেই পাই না। ওই যে বলে না— টু ফর জয়! তাহলে আনন্দ সেই জোড়া কাক দেখেই মেটাতে হয়। ঠিক আছে, রইল তো আরও ১১ মাস, একটাতে শালিক বসিয়ে নেবেন।

২য় পক্ষ— না, তা হয় না। প্রথমে একটা মধুস্বরের পাখি থাক বৈশাখের সঙ্গে। এই যেমন কোকিল, দোয়েল, ময়না। বা, দেখতে সুন্দর কোনো পাখি, এই যেমণ বুলবুলি, কাকাতুয়া। পচা নাড়িভুড়ি গেলা, আবর্জনা ঘাঁটা, কালো কুচকুচে, কমলমিত্রের চিবোনো রুক্ষস্বর নৈব নৈব চ।

১ম পক্ষ— আপনাদের বুদ্ধিকে চ্যালাকাঠ আর যুক্তিকে ডাং। আরে বাবা, কোকিল তো বসন্তের দু-মাসের একটার জন্য বরাদ্দ। আর দোয়েলের দেখা পাওয়া আর আমাদের দেশে শীত খুঁজে মরা একই ব্যাপার। বুলবুলির চুলবুলি ভাল্লাগে নাকি? আর, আবর্জনা ঘেঁটে সাফ করে বলেই তো অভিনন্দনযোগ্য। ওই যে রবি ঠাকুর লিখেছিলেন না গান— ‘বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক যাক যাক/ এসো এসো…/ এসো হে বৈশাখ’— এ-তো কাককে উদ্দেশ্য করেই লেখা।  

বিচারকঃ (গলাখাকারি দিয়ে) এটা অতিশয়োক্তি হয়ে যাচ্ছে, মান্যবররা। রবীন্দ্রনাথ এই গান চৈত্র শেষে বৈশাখকে উদ্দেশ্য করেই লিখেছিলেন, যতদূর প্রতীত হয়। এটা শুধু আমি নই, আশা, বিদ্বজ্জনরাও মানবেন। এসব কথা বলে ভবিষ্যতে যুক্তি খাড়া করলে কথা বলাকে সীমিত করতে বাধ্য হবে এই ‘পরীক্ষা প্রার্থনীয় আদালত’। মনে রাখবেন নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর উদ্দেশ্যেই এই ‘আগমার্কা গনেশ স্তম্ভ’। তবে হ্যাঁ, প্রস্তাবকদের প্রস্তাব ও উভয় পক্ষের সওয়াল-জবাবে সম্পূর্ণ স্থির সিদ্ধান্তে না-আসতে পারলেও, প্রস্তাবকদের কথার বাস্তবতা যথেষ্ট অধিক; দাঁড়িপাল্লায় না-মেপে প্রতিধ্বনিকে কাজে লাগিয়ে সমুদ্রের গভীরতা মাপার মতো বদ্ধ ঘরে প্রতিধ্বনির জোড় আন্দাজ করে এই মাপার কাজটি করা হয়েছে। এবং কাককে যেহেতু সাধারণ হিসেবে গণ্য করা যায়, অর্থাৎ এই বাংলার সর্বত্র সমানভাবে লক্ষ করা যায়, তাই বৈশাখ = কাক-ই সাব্যস্ত হলো। ২য় পক্ষকে পরবর্তী জ্যৈষ্ঠ মাসের নামানুসারে পাখির নাম প্রস্তাব করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।  

(কক্ষে একটা গুনগুন আওয়াজ। একবার ‘অর্ডার অর্ডার’ টেবিল চাপড়ানোতেও বন্ধ না-হওয়ায় বিচারপতি আবার)

বিচারপতিঃ কী ব্যাপার! এত কোলাহল কিসের? কী বলতে চান আপনারা?

৩য় পক্ষ— আজ্ঞে হুজুর আমাদের ৩য় একটি পক্ষ রয়েছে। আমাদের একটা মত ও বক্তব্য রয়েছে। আমাদের কথা না-শুনে আপনার রায় দেওয়া ঠিক হয়নি হুজুর! আমাদের কথাও শুনতে হবে।

বিচারপতিঃ হাই দিখো! আপনাগণেরও একটা পক্ষ রয়েছে? তাজ্জব কি বাৎ! তাহলে নাম নথিভূক্ত করেননি কেন? এখনই বা হাজির হলেন কীভাবে? মিরাক্যাল…

৩য় পক্ষঃ ওরা নথিভুক্ত করতে দেয়নি হুজুর! বলেছে, তোরা আবার কী বলবি? তোরা ভোট পাস সাড়ে সাত পার্সেন্ট। জমানত রাখতে পারিস না; আবার বড়ো বড়ো কথা। দেব সালটে। ভয়ে আর দাঁড়াইনি তখন; এখন সুযোগ বুঝে ঘুষে গেছি। জনগনের সঙ্গে মিশে ঢুকে পড়েছি। 

বিচারপতিঃ এখানে রাজনৈতিক কথাবার্তা বলে লাভ নেই। ভোটের সঙ্গে এই নামকরণের কী সম্পর্ক? তবু সকলের জেনে রাখা ভালো…, আচ্ছা, এই ওরা-টা কারা? কী তাদের অধিকার নথিভুক্ত করতে না-দেওয়ার?

৩য় পক্ষঃ মি লর্ড! ওরা মানে ওরাই, এই লড়াক্কু দুই পক্ষ, যারা আপসে থাকে, আর সামনে ঝগড়া রাখে। আর যারা নথিভুক্ত করছিল তারা, তিনদল মিলে। আপনাকেও বোকা বানাবে স্যার, ওরা! দেখবেন, ‘গনেশস্তম্ভে’ ভোটপার্সেন্টেজের ছাপ মেরে দেবে। আর স্তম্ভটা বদলে গেল কেন স্যার? অশোক থেকে গনেশ; প্রমোশোন হলো বুঝি! মানুষ থেকে ভগবানে! ওই আরেক পক্ষের কথা মাথায় রেখে নিশ্চয়ই স্যার?

বিচারপতিঃ অর্ডার অর্ডার। বড্ডো বাড়তি বকছেন দেখছি। স্তম্ভ বদলানো কোনো দম্ভের কথা নয়; একদম নয়। যা প্রশ্ন শুধু তারই উত্তর। পালটা কোনো প্রশ্ন নয়। প্রশ্ন করুন পরস্পরকে, এই মহান আদালতকে নয়। আমি বরদাস্থ করব না। আর মনোযোগসহ শুনুন— ‘বোকা বানাবে’? ‘হাতি-ঘোড়া গেল তল/ বক বলে হাঁটুজল’। আদালতের নিরপেক্ষতা প্রশ্নাতীত। হ্যাঁ, সে যাকগে। কিন্তু বৈশাখ নিয়ে মীমাংসা শেষ। সেটা নিয়ে আর কিছুই করার নেই আমার। আমি আজকের মতো ‘পরীক্ষা প্রার্থনীয় আদালত’ স্থগিত রাখছি। পরবর্তী ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষা-সমাধান’ পর্বে আপনারা কথা বলতে পারবেন। তবে তার আগে তারিখসহ নাম নথিভুক্ত করে নিতে হবে। এ-বিষয়ে আমি সংস্লিষ্ট দফতরকে নাম ঢোকানোর আদেশ জারি করছি। 

৩য় পক্ষঃ হুজুর মহানুভব। দেশে এখনো একটা জায়গা আছে, মনে হচ্ছে। দেখা যাক!

১ম ও ২য় পক্ষঃ (একসঙ্গে)। এর বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে গেলে হত না! 


(বিচারপতি নিজের জায়গায় বসে)

বিচারপতিঃ সম্মিলিত আপন-আপন-গণ। ‘পরীক্ষা প্রার্থনীয় আদালত’-এর কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে। পূর্ব অধিবেশনের সিদ্ধান্ত অনুসারে ৩য় পক্ষ নাম নথিভুক্ত করে হাজির হয়েছেন? সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন যথাস্থানে?

৩য় পক্ষঃ হয়েছি স্যার, বহুৎ হ্যাপা পুঁইয়ে। কিছু মাল খসিয়ে তবে হয়েছে। 

বিচারপতিঃ অর্ডার অর্ডার! বিধিসম্মত শব্দে কথা বলুন। সর্বোপরি এটা আদালত, ভিন্নরকম হলেও। ‘মাল’ শব্দটি কার্যবিবরণীর বাইরে থাকবে। অন্য শব্দ ব্যবহার করার আদেশ দেওয়া হচ্ছে।

৩য় পক্ষঃ জি স্যার। ঐ স্যার, গাঁটের কড়ি খসিয়ে। আর চপ্পল পাতলা করে। 

বিচারপতিঃ সে কী! এ-তো অনাচার, অনৈতিক। কেন, কেন? আমি তো সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে আদেশ দিয়েইছিলাম। তবু কেন…

৩য় পক্ষঃ মহানাবতার! আপনি এখানে বসে নির্দেশ দিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু ওরা কেসটা সরকার ও দলের হাইকম্যান্ডের কাছে সুপারিশ করে, যেন আমাদের এই নামকরণকাণ্ডের বাইরে রাখা হয়। সেখানে কেসটা পাঁচদিন পড়েছিল। এদিকে মিডিয়া ঝাঁপিয়ে পড়ে। পরে কর্মসমিতির বৈঠকে উপায়ন্তর না-দেখে যোগদানের অনুমতি দেওয়া হয়, সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কিছু গুজুর-গাজুর-ফুসুর-ফাসুর করে। দফতরের কাছে অনুমতি পত্র চাইতে গেলে ঘোরাতে থাকে, আজ নাতো কাল নয়তো পরশু। দফতরের আর্দালি কিছু হিন্টস দেয় লেন-দেন নিয়ে। পরে আজকের দিনটি মিস করে যাব ভেবে, আমরাও একটা রফাসূত্রে আসি, খসিয়ে। টাকা-টা শেষাবধি কোথায় যায়, সেটা এই ‘পরীক্ষা প্রার্থনীয় আদালত’ নজর রাখুক ও বিচার করুক, এই আমাদের আর্জি স্যার!

১ম পক্ষঃ স্যার, কুৎসা করছে। চক্রান্ত করছে স্যার। বদনাম করতে চাইছে আমাদের সরকারের আর দলের। এসব কথা এখানে আলোচিত হতে পারে না। 

২য় পক্ষঃ অনুসন্ধান দরকার। আদৌ টাকার লেনদেন হয়েছে কিনা? হলে সেই টাকা গেল কোথায়? সব পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধানের প্রয়োজন। এবং সেক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা দাবি করে কেন্দ্রীয় কোনো সংস্থা দিয়ে অনুসন্ধানের জন্য আর্জি জানাই হুজুর।

বিচারপতিঃ অর্ডার, অর্ডার। কোনো পক্ষ থেকে এই বিষয়ে আর কোনো কথা এই আদালত শুনতে চায় না। বিষয়টা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমাদের বিচার্যের মধ্যে পড়ে না। এখানে শুধু বাংলা মাসের নাম বাংলার পাখি দিয়ে প্রতিস্থাপিত করার প্রস্তাব আর সওয়াল-জবাব হবে। অন্য কিছু নয়। এটা মহান ‘পরীক্ষা প্রার্থনীয় আদালত’। বাংলার সংস্কৃতির সাময়িক পীঠস্থান। এখানে রাজনীতি, সমাজনীতি, আর্থিক লেন-দেন ইত্যাদি নিয়ে কোনো আলোচনা বরদাস্থ করা হবে না। এই আমার সিদ্ধান্ত ও নির্দেশ।

১ম পক্ষঃ বাঁচা গেল। কেসটার তেইশ মেরে দিচ্ছিল প্রায়। মহানুভব! আমরা প্রস্তুত, আদালতের মূল বিষয় নিয়ে কার্যক্রম শুরু হোক। 

বিচারপতিঃ মানে? শব্দপ্রয়োগ ঠিকভাবে করুন। তেইশ মারা মানে টা কী? এ কি কোনো সাংবিধানিক শব্দ?

১ম পক্ষঃ স্যার! ইয়ে, মানে… ওটার বদলে যেটা মুখে এসে গিয়েছিল প্রায় সেটা বললে আপনি অশ্লীল বলতেন, আর কার্যবিবরণী থেকে নির্ঘাত…

বিচারপতিঃ বেশ, বেশ। ওটা না-বলাই শ্রেয়। কিন্তু এটাতেও খটকা যাচ্ছে না। 

১ম পক্ষঃ তা কেন স্যার? তেইশ তো একটা নির্বিষ সংখ্যা মাত্র। অসাংবিধানিক হবে কেন? 

বিচারপতিঃ ওকে। হ্যাঁ! ইয়ে মানে বৈশাখ মাসের পর জ্যৈষ্ঠ মাস। আমার পূর্ব ঘোষণা অনুসারে এই মাসের জন্য পাখির নাম প্রস্তাব করবে ২য় পক্ষ। আপনারা প্রস্তুত!

৩য় পক্ষঃ (স্বগতোক্তি)। মাল চলবে না, তেইশ মারা চলবে। 

২য় পক্ষঃ হ্যাঁ, হুজুর। আমরা প্রস্তুত। জ্যৈষ্ঠ হলো গিয়ে সবচেয়ে বড়ো, মাস হিসেবেও বড়ো মাস। তাই আমরা একটা বড়োসরো পাখির নাম প্রস্তাব হিসেবে রাখতে চাই। ‘শকুন’ সেই পাখি। এরচেয়ে বড়ো পাখি এই মুহূর্তে আর নেই। তাই ‘শকুন’।

১ম পক্ষঃ আরে ছ্যা ছ্যা! শকুন একটা প্রস্তাব হলো? এই-ই বাংলার সংস্কৃতি? ভাগাড়ের পাখিকে একদম মাসের নামে বসিয়ে দেওয়া? এত পাখি থাকতে শেষে কিনা শকুন? যাদের যেমন দৃষ্টিভঙ্গি আর রুচি!

৩য় পক্ষঃ বাংলার এখন যা অবস্থা তাতে ‘শকুন’ নিঃসন্দেহে একটা সুপ্রয়োগ, এ-কথা স্বীকার না-করে থাকা যায় না ঠিকই। কিন্তু আমরা এই নাম সমর্থন করছি না। 

১ম পক্ষঃ সমর্থন করতে আর বাকি রইল কী? বাংলার কী এমন অবস্থা, যে শকুন সুপ্রযুক্ত। এটা মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা মহামান্য। এর ব্যাখ্যা আপনাদের দিতেই হবে। নয়তো কার্যবিবরণী থেকে এইসব উটকো কথা বাদ দিতে হবে, স্যার। ভারতবর্ষের যে কোনো রাজ্যের চেয়ে এখানকার অবস্থা যথেষ্ট ভালো। নানা রিপোর্টে আছে। বিশ্ব পর্যায়ে, দেশের র‍্যাংকে। এদের যত চালাকি, একবার ভোটের ময়দানে; সেখানে ফেলটু। আবার এখানে। তলে তলে জোট, বাইরে এলে চোট।

৩য় পক্ষঃ নিশ্চয়ই ব্যাখ্যা আছে আমাদের কাছে। অনেক তথ্যপ্রমাণ আছে। হুজুর বললেই পেশ করতে পারি। বাংলাকে একটা ভাগাড়ে পরিণত করা হয়েছে এই ক’বছরে; তাতে শকুনই বিচরণ করে। যদিও তথ্যভিজ্ঞ মহল জানাচ্ছে এই পাখিটা নাকি অবলুপ্তির পথে। আজ বাংলার ভাগাড়ে শুধু গবাদি আর গৃহপালিত পশুই নেই স্যার! আজ বাংলার ভাগাড়াকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা। সেখানে মাঝেমধ্যেই মানুষের লাশ-ও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে, মহামান্য!

বিচারপতিঃ অর্ডার, অর্ডার! আপনারা শুধু ঝগড়াই করবেন না যুক্তি প্রতিযুক্তি কিছু রাখবেন যাতে আমরা অভীষ্টে পৌছুতে পারি, যাতে বাংলার সুনাম বজায় রেখে আমরা নামকরণটা সেরে ফেলতে পারি।

১ম পক্ষঃ তবেই বুঝুন স্যার! ঝগড়া করতেই…

বিচারপতিঃ অর্ডার অর্ডার! বসুন আপনারা। আমি একে একে সবার কথা…

১ম পক্ষঃ বসতে বলছেন স্যার? আমাদের কিন্তু কেউ বসতে বলে না। বলতে বলে। ন্যায্য কথা বলার জন্য আমরা আন্তর্জাতিক পুরষ্কারও পেয়েছি। আর আপনি আমাদের বসতে বলছেন? বাংলা নিয়ে ওদের ধষ্টামোয় আমরা ছেড়ে কথা বলতে পারি না। আমরা বলছি…

বিচারপতিঃ হ্যাঁ, হ্যাঁ; নিশ্চয়ই বলবেন। বলার জন্যই এই আদালত আর আমি। যখন বলতে বলব, তখন বলবেন। তা বলে বাংলার রাজনীতি নিয়ে এখানে স্পিকটি নট। আমি দুই পক্ষেরই ভিন্নমত থাকায় ২য় পক্ষকে বলছি, আপনারা কি খুব ভেবেচিন্তে শকুন প্রস্তাব করেছেন? নাকি আর কিছুটা ভেবে আপনাদের মত বদলে অন্য পাখির নাম করবেন?

২য় পক্ষঃ না স্যার! আমরা ভেবেচিন্তেই প্রস্তাব করেছি। প্রস্তাবের পিছনে যুক্তি রেখেছি, যা রাজনীতির সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত নয়। যদিও যুক্ত করে নিতে অসুবিধার কিছু নেই।

বিচারপতিঃ তাহলে আপনাদের প্রস্তাব বহাল? বেশ। ৩য় পক্ষ, আপনারা উপযুক্ত বলেও সমর্থন করেননি। আপনাদের কিছু প্রস্তাব থাকলে, সেটা পেশ করতে পারেন।

১ম পক্ষঃ মহামান্য, আমাদের আগে সুযোগ দেওয়া উচিৎ ছিল না কি?

বিচারপতিঃ প্রশ্ন করছেন? আপনাদের সব কিছুতেই প্রথম হতে হবে?

১ম পক্ষঃ ওই আর কি, আপনি যা ধরবেন, আমরা তো বাধা দিতে পারি না।

বিচারপতিঃ পদে পদে বাধা দিচ্ছেন, আর বলছেন বাধা দিতে পারি না! কেমন কথা! বললাম তো, আমি সব পক্ষকেই সুযোগ দেব। প্লিজ ওয়েট। হ্যাঁ, বলুন ৩য় পক্ষ।

৩য় পক্ষঃ মহানুবতার। আমাদের কথা হচ্ছে…

বিচারপতিঃ কাম টু দ্য পয়েন্ট। আমাদের অনেক দূর পৌঁছুতে হবে।

৩য় পক্ষঃ ‘তোতা’।

বিচারপতিঃ পেছনে যুক্তি? উদ্দেশ্য?

১ম পক্ষঃ ওই স্যার ‘আতাগাছে তোতা পাখি’ আছে না! শিশুপাঠ্যে আছে স্যার, ছড়া। এর বেশি দম নেই তো!

বিচারপতিঃ অর্ডার, অর্ডার। ওদের বলতে দিন। 

৩য় পক্ষঃ উদ্দেশ্যটা খুব সোজা স্যার! দেখছেন না সবাই কেমন একজনের শেখানো বুলি তোতার মতো আউড়ে যাচ্ছে। সরকার, দল, প্রশাসন, মায় দলীয় বিদ্বজ্জন সব তোতা হয়ে গেছে। এটাই এখন রেওয়াজ আর ওদের আসলি চেহারা।

১ম পক্ষঃ ভালো হচ্ছে না স্যার! এ একদম উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমাদের সর্বোচ্চ নেতৃপদকে আক্রমণ! ষড়যন্ত্র।

২য় পক্ষঃ ঠিক স্যার, ঠিক। ব্যাপারটা সেরকমই। আমাদের সর্বোচ্চ নেতার গায়েও লাগে কথাটা। 

৩য় পক্ষঃ তবেই বুঝুন স্যার, হালখানা। মাসতুতো ভাই।

বিচারপতিঃ কাম টু দ্যা পয়েন্ট। যুক্তি?

৩য় পক্ষঃ যুক্তি? কী-ই বা যুক্তিবুদ্ধি দিয়ে চলছে স্যার? কী-ই বা ব্যাখ্যা করে বলা হচ্ছে, আজকের বাংলায়? তবু যা হোক, যুক্তি একটা আছে ঠিকই। গায়ের রং স্যার, সবুজ; কিন্তু বাঁকানো ঠোঁট মেটে বা কালো রঙের। এখন সবুজ-ই-সবুজ, কিন্তু ঠোকরানোয় কালিমালিপ্ত। 

বিচারপতিঃ এবারে বলুন ১ম পক্ষ। আপনাদের অভিমত। সমর্থন না বিরোধিতা?

১ম পক্ষঃ সমর্থন হয়তো করা যেত, কিন্তু ওরা বলে করছি না। হ্যাঁ স্যার! এখন সব সবুজ আবির। যেদিকে তাকাবেন শুধুই সবুজ। সাড়ে তিন দশকে ওরা ধূসর বানিয়ে ছেড়েছিল; আমরা সবুজ তৈরি করেছি। যাইহোক রঙের কথাই যখন এলো, তাহলে আমরা প্রস্তাব করছি নীল আর সাদা রংযুক্ত কোনো পাখির নাম। 

বিচারপতিঃ আহা, পাখির নাম-টা তো বলুন। নীল-সাদা রঙের পাখি বলে তো কোনো পাখি হয় না। আচ্ছা, আপনারা ভাবুন। আমি ২য় পক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি, তাদের মতামত, সমর্থন-বিরুদ্ধতা জানাতে। 

২য় পক্ষঃ সমর্থনের কোনো প্রশ্নই আসে না মহানুবতার। কেস-টা ‘মুই’ না ‘তুই’। দ্বিতীয়তে কে? আমরা ২য়-তে। সমর্থন করে সেই আসন খোয়ানো যায় না। রঙের কথাই যখন আসছে বারে বারে, তবে কালচে গেরুয়া ‘শকুন’ কী দোষ করল? আমরা শকুনেই স্টিক করে থাকতে চাই।

বিচারপতিঃ বেশ। ১ম পক্ষ! আপনারা নাম খুঁজে পেলেন?

১ম পক্ষঃ ‘নীল শুমচা’। একটু অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই সব্বাই স্যার। কিন্তু নেট ঘেঁটে দেখা গেল বাংলাদেশ, ভারতে এই পাখির অস্তিত্ব রয়েছে। খুব একটা চেনা-জানা নয়, কিন্তু নীল রং-টাই প্রধান। আমাদের প্রস্তাব ‘নীল শুমচা’।

৩য় পক্ষঃ ‘এতক্ষণে অরিন্দম কহিলা বিষাদে’। স্যার, এরা পূর্বসূত্র ও শর্ত কিছুই না-মেনে প্রস্তাব করছে। শর্ত ছিল সাধারণে চেনা-জানা পাখির নাম প্রস্তাব করে সাব্যস্ত করতে হবে। সাধারণ বাঙালীর কত পার্সেন্ট মানুষ এর নাম শুনেছে! আপনি নিজে শুনেছেন স্যার? কেউ চেনে-জানে? হায়!

২য় পক্ষঃ ঠিক কথা। আমরা তো প্রথম শুনলাম। নেট ঘেঁটে যখন, তাহলে ওরাও প্রথমই জেনে থাকবে। কারণ, নেট দুনিয়ায় বা স্যোসাল মিডিয়ায় এখনো আমাদের চেয়ে দড় কেউ হয়ে ওঠেনি, স্যার। ওটাতে আমরা এখনো করে খাচ্ছি।

বিচারপতিঃ উপস্থিত সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবারে আমার ভার্ডিক্ট শোনাতে চাই। দীর্ঘক্ষণ জ্যৈষ্ঠ্যমাস নিয়ে নাড়াচাড়া হলো, স্বাভাবিকভাবে আমরা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পারলাম না, সহমত না-হওয়ার কারণে। এখানে প্রথমে প্রস্তাবিত হয় ‘শকুন’, কোনোপক্ষই তা সমর্থন করেনি। পরে আসে ‘তোতা’-র নাম, সেটাও বাকিরা খারিজ করে দেয়। শেষে আসে ‘নীল শুমচা’; যা নিয়ে সমর্থনের চেয়ে বিরোধিতা অনেক বেশি, সঙ্গে পূর্বশর্ত ভঙ্গের অভিযোগ। এই সমস্ত আলাপ আলোচনা শেষ বলে ধরে নিতে হবে। আমাদের একটা মাস নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না। আরও বোঝা যাচ্ছে এখানে কোনোপক্ষই অন্যপক্ষকে সমর্থন করবে না। সেক্ষেত্রে আমার রায়দান অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে। আমি সমস্তদিক বিচারবিবেচনা করে, মাসের নাম, তার তাৎপর্য, এবং বাংলার পাখি, তাদের গ্রহণযোগ্যতার কথা মাথায় রেখে জ্যৈষ্ঠ মাসের জন্য ‘শালিক’ পাখির নাম সাব্যস্ত করছি, যে নাম বৈশাখের সময় উঠে এসেছিল। অর্থাৎ কিনা, জ্যৈষ্ঠ = শালিক।

(সভায় গুঞ্জন ওঠে।) 

১ম পক্ষঃ যাক, মন্দের ভালো। জোড়া শালিক স্যার। 

২য় পক্ষঃ যাক, আমাদের মান-সম্মানও কিছুটা রইল।

৩য় পক্ষঃ হ্যাঁ স্যার! গাঙশালিক হলে আরও জমে যেত। 

বিচারপতিঃ অর্ডার, অর্ডার। সবাই নিজের নিজের আসন গ্রহণ করুন। বাকি সাধারণ একটু চুপচাপ বসে থাকুন। আমাদের সহযোগিতা করুন।

কেউ একজনঃ আমরা তো চুপচাপ বসেই আছি মহানুবতার। আমরা সব জায়গাতেই চুপচাপ বসে থাকি। সেটাই আমাদের বলা হয়, শেখানো হয়, বোঝানো হয়। 

অন্য একজনঃ না বুঝতে চাইলে, ঠেসে বোঝানো হয়। আমরা পাড়ায় চুপচাপ, সমাজে চুপচাপ, আমরা চুপচাপ ছোটোফুল বা বড়ো ফুলে ছাপ।

অন্য আরও একজনঃ হয় ছাপ, নয় সহ্য করো যতো চাপ। ছোকরাদের কাছে চুপচাপ, পুলিশে গিয়ে চুপচাপ, আদালতে এসে চুপচাপ। আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে মহানুভব। আপনি চালিয়ে যান। 

বিচারপতিঃ অর্ডার, অর্ডার। এত কথার জায়গা এটা নয়। আমরা কার্যক্রমে ফিরি।

১ম পক্ষঃ মালটাকে একটু দেখে রাখ তো ঝণ্টে। 

বিচারপতিঃ কিছু বলছেন?

১ম পক্ষঃ একদম না স্যার! আমরা একমত, আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। সমস্ত রকমের অনুপ্রেরণার প্রকল্প যথাসময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। আমাদের সেই অনুপ্রেরণাতেই এখানে পাঠানো হয়েছে।

২য় পক্ষঃ হায় প্রকল্প! হায় অনুপ্রেরণা! উজাড় সব কাটমানিতে।

৩য় পক্ষঃ খাওরে খাও/ সবাই মিলে/ উজাড় করে/ খাওরে খাও। ছোটোরা খাও/ বড়োরা খাও/ মহারা খাও/ খাওরে খাও।

বিচারপতিঃ অর্ডার অর্ডার। বলি হচ্ছেটা কি? এত বাওয়াল কেন? বেশি সরগোল আর বহির্ভূত কথার বান ডাকলে আমি স্থগিত ঘোষণা করে দেব। যাক! ‘আসছে আষাঢ় মাস’—

৩য় পক্ষঃ ‘মন তাই ভাবছে, কী হয় কী হয়!’ 

বিচারপতিঃ হ্যাঁ, আপনারাই এবারে নাম প্রস্তাব করুন। আষাঢ় মাসের নামে পাখির নাম।

৩য় পক্ষঃ আমাদের প্রস্তাবের সুযোগ দেওয়ায় ধন্যবাদ মহোদয়। আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষা। কালো মেঘ আর বৃষ্টি। বন্যা। ঘূর্ণিঝড়-টাইফুন। গরীব মানুষের কাজ-কর্ম কম। বিশেষত গ্রামের মানুষের ঘরে আকাল। জিনিসপত্রের দাম চড়া। পেটে অন্ন জোটে না। রোগভোগ বাড়ে…

বিচারপতিঃ আরে পাখির নামটা বলুন। বলে যুক্তি-বুদ্ধি দিন।

৩য় পক্ষঃ স্যার, আগে যুক্তি উদ্দেশ্য আর বিশ্লেষণ করে পরে নামটা বলা যায় না, বুঝি! কিন্তু আমরা যে স্যার!

বিচারপতিঃ বলুন বলুন। আরেকটা তর্ক তুলে লাভ কী! যা বলবেন, সংক্ষেপে শেষ করে পাখির নামটা বলুন, যেটা জরুরি। 

৩য় পক্ষঃ যথা আজ্ঞা মহানুভব! পাখিটি হচ্ছে… পাখিটার নাম— ‘হাড়গিলে’। যারা হাড় পর্যন্ত হজম করে ফেলে। পচা-গলা নোংরার মধ্যে থাকে। সময়ের রিপ্রেজেন্টিটিভ।

১ম পক্ষঃ আরে ছো ছো! চোরের মায়ের বড়ো গলা। ওই হাড়গিলের মতোই। স্যার, ষড়যন্ত্র করে এসেছে। সাড়েতিন দশকে চোখে ন্যাবা হয়েছে। বাংলার ভালোটা চোখে পড়ে না স্যার! শুধু দুর্গন্ধের দিকে নজর। বাংলাকে হ্যাটা করার একঘেয়ে ষড়যন্ত্র। এভাবে সাজিয়ে যদি ৩৫৬ করা যায়!

২য় পক্ষঃ এটাই সময়ের দাবি।

৩য় পক্ষঃ আমরা একটা সময়কালের জন্য একটা পাখির নাম প্রস্তাব করেছি; সেটা যদি বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে মিলেমিশে যায় এবং সময়ের দাবি হয়ে ওঠে, তাতে ষড়যন্ত্র বা চক্রান্তের গন্ধ খুঁজে পাচ্ছেন যারা, তারা সহানুভূতি খুঁজছেন, স্যার।

বিচারপতিঃ অর্ডার অর্ডার। আমরা এখানে সময়ের দাবি নিয়ে আলোচনা বা বিচার বিশ্লেষণ করতে বসিনি। সেই অধিকারও এই আদালতের নেই। সুতরাং আমি সব পক্ষকে নির্দেশ দিচ্ছি মূল বিষয়ে ফিরে আসতে। পাখি ভাসান, ওড়ান, কাটাকাটি খেলুন। বাংলার পাখি নিয়ে পড়াশোনা করুন। গোপাল হালদার মাস্ট। বাংলার দিল পাখির দিলের সঙ্গে মিশিয়ে দিন। হ্যাঁ, যা বলছিলাম… আমি ২য় পক্ষকে তাদের মতামত ব্যক্ত করতে বলছি।

২য় পক্ষঃ আমরা সমর্থন করছি স্যার। বৃহৎ অংশের মানুষের কল্যানের জন্য আমরা ‘হাড়গিলে’ সমর্থন করছি, আষাঢ়ের প্রেক্ষিতে।

বিচারপতিঃ বেশ, আপনাদের সমর্থন লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। এবারে আমি ১ম পক্ষ-কে তাদের বক্তব্য পেশ করার জন্য বলছি, যদিও আমি ইতিমধ্যেই বুঝে গেছি তাদের অবস্থান। তবু রেকর্ড করার জন্য বক্তব্য পেশ করুন।

১ম পক্ষঃ মহামান্য, আপনি বুঝতেই পারছেন আমাদের অবস্থান। ভোটে সাব্যস্ত একটা জনপ্রিয় দল হয়ে আমরা বাংলাকে ভাগাড় কিংবা আস্তাকুঁড় করিনি, সুতরাং শকুন কিংবা হাড়গিলে সমর্থনের প্রশ্ন আসে না। বরং আমরা আমাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে এই কুৎসা ও জঘন্য ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শেষবিন্দু রক্ত দিয়ে প্রতিবাদ করব, প্রতিরোধ গড়ে তুলব। প্রয়োজনে আরও সব ব্যাবস্থাদি নেব, যেন এই অশুভ শক্তির জোট পর্যুদস্ত হয়। আমরা জনতার দরবারে যাব। জনতাই এদের রুখে দেবে। জনতার কাছে এদের কৈফিয়ৎ দিতে হবে। (দলের বাকি কয়েকজন— ‘দিতে হবে, দিতে হবে’।)

বিচারপতিঃ আরে রাম-রাম! এটা আদালত, স্ট্রিটকর্ণারিং নয়। আহা, বাপুরা এখনই জনতার দরবারে যেতে হবে না। আঙুলের কালি শুকোয়নি যে! এই দরবারেই থাকুন। শেষবিন্দু রক্ত পরে দেবেন, প্রতিবাদ যা করার এখানেই করুন আর প্রতিরোধের প্রয়োজন পড়বে না। আপনাদের কোনো নাম প্রস্তাব করার মতো থাকলে তা করতে পারেন।

১ম পক্ষঃ আছে স্যার, আছে। আমরা শান্তিপ্রিয়, শান্তিকামী। বাংলার সমতলে পাহাড়ে অরণ্যে আজ শান্তির পতাকা পতপত করছে। সবাই হাসছে সাদাপায়রা থেকে স্বাস্থ্যসাথী, সবাই হাসছে। জঙ্গলের চেরা লগ থেকে বাঘ-হায়না; পাহাড়ের গুরুং-ঘুরুং বজ্র থেকে তামা-নেকড়ে সব হাসছে উন্নয়নের জোয়ারে। দু-চারটে যা খুচখাচ অশান্তি, তা বিচ্ছিন্ন ও ছোটো ঘটনা মাত্র। সেটা পৃথিবীর যে-কোনো দেশে, এমনকী ভারতের যে কোনো রাজ্যেই হতে পারে, হচ্ছে, এবং হতে থাকবে। কিন্তু শান্তিপ্রিয় বঙ্গবাসী শান্তিতে আছে; তাই আমাদের প্রস্তাবিত পাখির নাম— ‘সাদা পায়রা’, যা শান্তির দূত। 

বিচারপতিঃ হুম! বোঝা গেল, ‘সাদা পায়রা’। বক্তিমে কিছুটা বড়ো অবিশ্যি। যাই হোক, এই প্রসঙ্গে আমরা সমবেতরাও একচোট হেসে নিতে পারি, কী বলুন!  (২য় ও ৩য় পক্ষ এবং কয়েকজন বাদে সবাই হাসতে থাকে। সবার হাসি দেখে শুনে আদালতের কর্মচারী, সিকিউরিটির লোকরাও হাসি শুরু করে)। 

২য় ও ৩য় পক্ষঃ (প্রায় একসঙ্গে) এটা কী হচ্ছে স্যার! আপনি সুদ্দু হাসছেন, আর সবাইকে বলছেন হাসতে? এ-তো পক্ষপাত দুষ্ট হাসি। ওই আসনে বসে আপনার এই ধরনের মস্করাহাসি শোভা পায় না স্যার! এটা গহৃত অপরাধ। আমরা তাহলে আদালত বর্জন করছি। 

বিচারকঃ (হাসি কিছুটা সামলে) আরে যাচ্ছেন টা কোথায়? বসুন বসুন। আরে বাবা হাসির কথা শুনেলে হাসব না? পেটে খিল দিয়ে বদহজম বাড়াবো?

২য় ও তৃতীয় পক্ষঃ ওহো এই কতা! 

(নিজেরাও হাসতে শুরু করল। বাকি চুপচাপরাও। এক হাসিমহল। হঠাৎ, বিচারকের হাতুড়ি)

বিচারকঃ অর্ডার, অর্ডার, অর্ডার। হাসিপর্ব শেষ। হ্যাঁ, কী যেন বলছিলাম—  অন্য রঙের নয়, জংলি নয়, একদম সাদা। ভালো কথা। এ নিয়ে ২য় ও ৩য় পক্ষের বক্তব্য, একে একে বলুন।

২য় পক্ষঃ স্যার কোনোমতেই সমর্থন করছি না। বিরোধিতা করছি। বাংলাকে শ্মশান বানিয়ে, গণধর্ষণের আদর্শ ক্ষেত্র গড়ে তুলে এখন ‘সাদা পায়রা’ ওড়ানো হচ্ছে, যা হাস্যকর। ঘোড়াতেও হাসবে স্যার।

৩য় পক্ষঃ আমরা আমাদের প্রস্তাব ছেড়ে নড়ছি না। সুতরাং সমর্থন তো নয়ই, প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এমন কলুষিত বাংলা আগে কেউ দেখেনি; আপনি উপস্থিত সাধারণ মানুষের মধ্যে থেকে দু-চারজনকে এ বিষয়ে তাদের মতামত দিতে বলুন স্যার! 

বিচারপতিঃ অর্ডার, অর্ডার। আমি কখন কী পদক্ষেপ নেব, তা নিতান্তই আমার সিদ্ধান্ত। তা নিয়ে আপনাদের কোনো পরামর্শ বা আবেদনের প্রয়োজন নেই। ভবিষ্যতে এটা মনে রাখবেন; না হলে আমি আপনাদের পক্ষকে বহিষ্কার করতে বাধ্য হব।  

১ম পক্ষঃ ওয়ে ওয়ে! আ হা হা! স্যার এমন জোরে গুঁতো মারবেন না স্যার। ব্যথা পাবে যে! লজ্জাহীনের দল।

বিচারপতিঃ অর্ডার অর্ডার। হাসি-মস্করার প্রয়োজন দেখি না। এখন আহ্লাদিত, পরে আবার দাঁত-নখ বেরিয়ে না-পড়ে। যাইহোক, সমস্ত পক্ষের কথা শুনে, তাদের প্রস্তাব সমর্থন বিরোধিতা যুক্তি প্রতিযুক্তি ইত্যাদি শুনে এবং বিবেচনা করে আমি আমার রায় শোনাচ্ছি। এমনিতে মনে হতে পারে দুটি পক্ষ যখন একমত একটি পাখির নামে তখন অন্য আর একটি মাত্র পক্ষের বক্তব্যকে অস্বীকার করে সংখ্যাগুরুর প্রস্তাবে শিলমোহর বসিয়ে দেওয়াই উচিত। কিন্তু মহোদয়রা বিষয়টা এত সরল নয়। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের যথেষ্ট সজাগ থাকতে হবে, সহানুভূতিশীল হতে হবে, বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির দিকে নজর রাখতে হবে, সর্বোপরি দেখতে হবে এই নামকরণে পরবর্তীকালে জনগণের ওপর তার প্রভাব ইত্যাদি। তিনজন একত্রে জানালো ‘সূর্য পৃথিবীর চারধারে ঘোরে’, একজন জানালো ‘সূর্যের চারপাশে ঘোরে পৃথিবী’, সেক্ষেত্রে সংখ্যার বিচারে ‘পরীক্ষা প্রার্থনীয় আদালত’ কোনো ভুল অবৈজ্ঞানিক তথ্যকে স্বীকৃতি দিতে পারে না। তাই সমস্ত দিক বিচারবিবেচনা করে আমি আষাঢ় মাসের নামে ‘বক’-এর নাম সাব্যস্ত করছি। অর্থাৎ আষাঢ়= বক। এ বিষয়ে আর কোনো আলোচনা ও মতামতকে আদালত মান্যতা দেবে না।

১ম পক্ষঃ আহা কী রায়! প্রায় জনতার মনের মতো। প্রায় আমাদের কাছাকাছি। সাদা পায়রা, সাদা বক। দুই-ই শান্তির প্রতীক। দুই-ই বাংলার নিরবিচ্ছিন্ন শান্তির যথার্থ প্রতীক, মানে… … 

৩য় পক্ষঃ স্যার! আষাঢ়ের কালো মেঘের ক্যানভাসে সাদা বক উড়িয়ে দিচ্ছেন যে! কেমন বেমানান না! 

বিচারকঃ কথা হবে না। 

১ম পক্ষঃ কথা হবে না, ব্যস!

৩য় পক্ষঃ আহারে, আহ্লাদে আটখানা। বক যেন শুধু সাদাই হয়, আর স্যার যেন ‘সাদা বক’ সাব্যস্ত করেছেন! বক কালচেধূসরও হয়; আর ঠুকরে মাছ-কীট খায়। শান্তি না অশান্তি!

২য় পক্ষঃ কোথায় বক? আর কোথায় ‘সাদা পায়রা’! পগার পাড় আর হরিদ্বার।

১ম পক্ষঃ তাই বলে তো মুখে ঝামা ঘষে দেয়নি। সমান্তরাল ভাবনা-চিন্তা। বক আর হাড়গিলে, ওই আপনাদের হরিদ্বার আর …

বিচারপতিঃ অর্ডার, অর্ডার। রায় নিয়ে কোনো কথা হবে না। শান্ত হন সবাই। আমরা এক চতুর্থাংশ পথ পাড়ি দিয়েছি, এখনো অনেকটা চলা বাকি। আশা করি সকলের সহযোগিতা এই আদালত পাবে। আজকের মতো আমি কার্যক্রম স্থগিত রাখছি; আমরা আবার মিলিত হব ঠিক এক সপ্তাহ পরে। আমাদের চেষ্টা থাকবে সেদিনই আমরা যেন আমাদের অভীষ্টে পৌঁছে যেতে পারি। কেননা, তার এক সপ্তাহের মধ্যেই আমাকে রিপোর্ট পেশ করতে হবে।

২য় পক্ষঃ কোথায় স্যার?

বিচারপতিঃ কোথায় যে কে জানে! হবে একটা কোথাও!

৩য় পক্ষঃ দার্শনিকের মতো শোনাচ্ছে স্যার!

২য় পক্ষঃ না মানে আমরা জিজ্ঞাসা করছিলাম, কেন্দ্রে না রাজ্যে? রাষ্ট্রপতি না রাজ্যপাল? প্রধানমন্ত্রী না মুখ্যমন্ত্রী?

বিচারপতিঃ এত কিউয়েরেসিটি ভালো নয়। (নিচু স্বরে, ‘কে যেন, আহা! কারা যেন এসব করতে বললো!  বেমালুম ভুলে গেলুম!’) 

৩য় পক্ষঃ আহা কত অসহায় লাগছে আপনাকে, আপনার চেয়ারটাকে। আরেকবার হাসির রিহার্সটা হবে নাকি স্যার! 

বিচারপতিঃ তোরা ‘উলটা বুঝলি রাম’। সব মনে পড়ে গেছে। কী মজা, কী মজা! এন্তার মনে পড়ে গেছে। ক্রমশ প্রকাশ্য। ঘাবড়াবেন না। হাসি নয় এবার সবাই মিলে ব্রতচারী নৃত্য করা যায়। বাংলার সংস্কৃতিতে লোকসংকৃতির বন্ধন …

২য় পক্ষঃ ওসব নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না স্যার। ওটা আমাদের জিম্মায়।

৩য় পক্ষঃ রাম বলে কথা। বাম-এর চেয়েও (পেইন মলম) ভালো। তবে ‘রাম নাম সত্য হ্যায়’ করে  না-ছাড়ে। 


(আদালত বসবে আবার। আবার নাম নিয়ে বাহাস। আদালতে কয়েকটি পক্ষ ছাড়াও সাধারণ কিছু মানুষ উপস্থিত। কিন্তু এই দু-দিনে তাদের মুখ থেকে অন্তত বিচরপতি কিছু শুনতে চাননি, মতামত নেননি। বিষয়টা নিয়ে বাজার একটু গরম। এরই মধ্যে সপ্তাহান্তে, আদালত শুরু হওয়ার মুখে কক্ষের বাইরে তিনটি পক্ষের কিছু কথাবার্তা এইরকম।)

১ম পক্ষঃ (৩য় পক্ষকে উদ্দেশ্য করে) আপনারা সেদিন সাধারণ জনতার মত নিতে বিচারপতিকে বলছিলেন কেন? আমরা কি কিছু কম আছি নাকি?

৩য় পক্ষঃ কেন, ভয় পাচ্ছেন?

১ম পক্ষঃ আমরা ভয় পাব কেন? ভয় তো আপনাদের আর ২য় পক্ষের। বাংলার সাধারণ মানুষ আজ আমাদেরই পক্ষে। যথার্থ আমাদের। ওখানে যাকে ডাকবেন, সেই ঘাসফুল, সেই মূল। ঘরে ঘরে তৃণ, ঘরে-বাইরে মূল। আমাদের আবার ভয় কিসের! বলছিলাম, আমরাই যদি পারি, তাহলে ওদের অংশগ্রহণের কী প্রয়োজন?  

২য় পক্ষঃ গত জামানাও শেষ সময়ে একই কথা বলত। আমি সি, তুমি পি, তারা এম। আমরা সবাই লালে লাল। তার পরেই দেখা গেল আমি-তুমির অবস্থা। ওরা-আমরা।

৩য় পক্ষঃ ঐ সময়ে তবু একটা গণতান্ত্রিক বাতাবরণ ছিল, আইনের শাসন ছিল, সংবিধানের নিরাপত্তা ছিল। আর এখন এখানে চৈত্রের গাজনমেলা; আর দেশে সং-এর নাচন। দেশে কোনো গণতন্ত্র আছে কি? আইনের শাসন? সংবিধানের পরোয়া? কেন্দ্রের হুংকার বিরোধীশূন্য ভারত, রাজ্যের শ্লোগান বিরোধীশূন্য বাংলা। বিরোধীরা যাবে কোথায় বলতে পারেন? আর বিরোধীশূন্য হলে গণতন্ত্র থাকে?

১ম পক্ষঃ এত লেকচার ছুটিয়েই এই অবস্থা। দল একদম আইসিইউ তে। স্যালাইন অক্সিজেনেও আর চলছে না, এখন ভেন্টিলেশন-এ। তবু মুখ দিয়ে জনগণ-জনগণ ছাড়ে না। আরে জনগণই তো টেনে নামিয়েছে টং থেকে। আর মূলকে তুলেছে মাথায়, টপে। বিরোধী না-থাকলে আমরা কী করব, সিঙ্গাপুর থেকে কিনে আনব? তবুও যে এই আদালতে আপনাদের অংশ নেওয়ার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, এই বেশি। আরেকটি পক্ষকে তো সেটাও দেওয়া হয়নি।  

২য় পক্ষঃ নিশ্চয়ই। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরাই একদিকে এখানে পদ্মনাল, আর উপরে একদম পুরো পদ্ম ফুটে একাকার। আমাদের যথেষ্ট ক্ষমতা, দক্ষতা, কার্যকারীতা আছে এই নামকরণে। উটকো ক’জন সাধারণের কথা শুনে কী করবেন বিচারক? আরে বাবা, বিচারব্যবস্থাটাও তো দেশের মধ্যেই, না দেশের বাইরের? নাকি বিচারক কোনো ব্রিটিশ, আমেরিকান, অস্ট্রেলিয়ান! সে-ও তো এই দেশেরই নাগরিক! সে তো এই সমাজরেই একজন, নাকি!

৩য় পক্ষঃ বোঝা গেল। আপনাদের ইচ্ছা, চাহিদা সব বোঝা গেল। এটা অবশ্য আমরাও ঠিক ভেবে দেখিনি, বা সার্ভে করে দেখিনি, জনসাধারণ আসলে কী চায়! স্বল্প সময়ের জন্য ‘হাতে টাকা ডোল, হাসে গালে টোল; না দীর্ঘকালীন কোনো অধিকার, যাতে সে খেতে-পরতে পায় স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সুযোগ পায়। কী যেন বুঝি না বাবা!

১ম পক্ষঃ তা বোঝেন না যখন, তখন জনগণ ডেকে আর লাভ কী? আর ডাকবেন না মশাই। কিছু কিছু আছে বড্ডো ডেঞ্জেরাস। কিচ্ছুটি বুঝতে দেবে না।

২য় পক্ষঃ ঠিক। আর ডাকবেন না। আরে কখন যে কী করে বসে কে জানে?

৩য় পক্ষঃ ঠিক, ঠিক। আর ডাকার দাবি তোলাটা ঠিক হবে না। ফ্র্যাঙ্কেস্টাইন হয়ে যেতে পারে।

(বিচারক তাঁর নিজের জায়গায়। উপস্থিত প্রায় সকলেই। শুরু হচ্ছে আদালতের কাজ)

বিচারপতিঃ প্রথমেই আমি জানিয়ে রাখি, আজ আমাদের বাকি ন-টি মাসকে ইয়ে, মানে ঠিকঠাক করতে হবে। তাই প্রস্তাব ও সমর্থন-অসমর্থন এবং আলোচনা হবে কনস্ট্রাকটিভ এবং সংক্ষিপ্ত। অনুরোধ আমাদের আলোচ্যের বাইরে বেরিয়ে বেশি প্রসঙ্গ কেউ উত্থাপন করবেন না বা অযথা আলোচনায় বা বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে মহার্ঘ সময় নষ্ট করবেন না। আশা করি, আপনারা বিষয়ের গুরুত্ব যথার্থ অনুধাবন করে এই ‘পরীক্ষা প্রার্থনীয় আদালত’-কে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন। শুরু করা যাক। আজ প্রথম মাসের নাম— শ্রাবণ। এর বিকল্পে একটি পাখির নাম প্রস্তাব করুন ১ম পক্ষ।

৩য় পক্ষঃ এবার স্যার, শেষ থেকে শুরু করলে হতো না? একবার ওরা প্রথমে পেল, একবার আমরা প্রথমে!

বিচারপতিঃ অর্ডার, অর্ডার। কোনো কথা নয়। আদালতকে আদালতের মতো চলতে দিন। বসে পড়ুন, বসে পড়ুন। হ্যাঁ, বলুন প্রথম পক্ষ।

১ম পক্ষঃ আপনার আদালত চালানোর দক্ষতায় আমরা মুগ্ধ মহামান্য! আরে আমরাই তো সব। রোজ আমাদের দলে কত নেতা ঢুকছে, ‘আয়ারাম-গয়ারাম/ যত পুণ্যি এই ধাম’। যাকগে, নীল আমাদের একটা চাই-ই চাই। এককথায়— শ্রাবণ = নীলকণ্ঠ পাখি। এত সুন্দর, বাংলায় এত সুন্দর একটা পাখির নাম কেই বা করবে?

বিচারপতিঃ ২য় পক্ষ, বলুন আপনাদের কথা। সমর্থন বা অন্য নাম প্রস্তাব, সংক্ষেপে।

২য় পক্ষঃ স্যার, একটু ব্যাখ্যা করে বলার সুযোগ আশা করতে পারি তো! নিশ্চয়ই পারি। শ্রাবণ বর্ষার নানা ভয়াল রূপের প্রতীক। অঝোর ধারা। সব নদীতে জলের প্লাবন। নদীগুলো নাব্যতা হারিয়েছে কতকাল। ফলে বন্যা আর মহামারী বাংলার গ্রাম থেকে শহরে। অভুক্ত মানুষের মাথা গোঁজার স্থান নেই। সরকারের এদিকে কোনো নজরও নেই। আর অস্থায়ী শিবিরগুলোতে যত স্থায়ী অনাচার-অনিয়ম-কাটমানি। ওপরওয়ালার দেওয়া টাকা নয়-ছয়, ছয়-তিন, তিন-শূন্য। এমতাবস্থায় আমাদের বিচারে যে পাখিটার নাম সবার আগে মনে পড়ে তা হলো— ‘পানকৌড়ি’। কালোর প্রতীক; আর ভরাজলে ডুবে মাছ ঠুকরে তোলায় পারদর্শী। অতএব ‘পানকৌড়ি’। 

বিচারপতিঃ বসুন, বসুন। যথেষ্ট হয়েছে। এত বড়ো ব্যাখ্যার প্রয়োজন ছিল না। পানকৌড়ি কতটা পাখি ‘ভেবে দেখা কমিটি’-কে রেফার করতে হবে মনে হচ্ছে, যদি ঠিক হয়। সে দেখা যাবে খন, ৩য় পক্ষ, আপনারা বলুন, ১ম পক্ষকে সমর্থন করছেন, না ২য় পক্ষকে সমর্থন করছেন, নাকি তিন নম্বর আরেকটা নাম ভাসিয়ে দিতে চান?

৩য় পক্ষঃ মহানুভব! দু-পক্ষের কোনো পক্ষকেই আমরা সমর্থন করতে পারি না। করছিও না। 

১ম পক্ষঃ কেন হে অন্ধাবতার! সুন্দর কিছু চোখে ঠেকে না বুঝি! আপনারা না আবার সৌন্দর্যতত্ত্ব নিয়ে বড়ো-বড়ো কথা বলেন। নীলকণ্ঠের সৌন্দর্য আপনাদের পোষায় না বুঝি!

৩য় পক্ষঃ কী করে আর পোষায় বলুন? সৌন্দর্যতত্ত্বের আপনারা কী বোঝেন মশাই। এক কণা সৌন্দর্য দিয়ে বড়ো এক ক্যানভাসের কদর্যতা লুকোনো যায় না, সেটা জানেন? কাকে বলে সুন্দর…

বিচারপতিঃ অর্ডার, অর্ডার। সুন্দর কাকে বলে, বা সৌন্দর্যতত্ত্ব নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন দেখি না। আপনারা সমর্থন করছেন না একটাও। তাহলে আরেকটি নাম বলুন। শুধু নাম।

৩য় পক্ষঃ এটা একটু বাড়াবাড়ি স্যার! ওরা বললে কারণসহ, আমরা বললে শুধুই নাম। যথা আজ্ঞা। ‘হুতোম প্যাঁচা’।

বিচারপতিঃ শুধু প্যাঁচা নয়? ‘হুতোম প্যাঁচা’? একেবারে নির্দিষ্ট করে দিচ্ছেন? বেশ বেশ।

(একটা কেমন উসখুশ এবং গুঞ্জন শোনা যায় আদালত কক্ষে)

বিচারপতিঃ অর্ডার, অর্ডার। গোলমাল-গুঞ্জন নয়; আদালত চলছে। এই যে, আপনি (একজন সাধারণকে চিহ্নিত করে) বড়ো উতলা হয়ে উঠেছেন। বলুন, কী বলবেন!

১ম সাধারণঃ হ্যাঁ, বলতে চাই সার! ওই ১ম পক্ষ যেটা বলছে, সেটাই। 

৩য় পক্ষঃ ও এখানেও এনে বসিয়ে রেখেছেন?

বিচারপতিঃ কী বলছেন ১ম পক্ষ! কী সেটা?

১ম সাধারণঃ ওই যে সার, যা বলেছে তাই, নীল নীল।

২য় সাধারণঃ হ্যাঁ স্যার, ওটাই নিন।

১ম পক্ষঃ তাহলে তো হয়েই গেল স্যার। জনসাধারণও বলছে নীলকণ্ঠ। এটাতেই সিলমোহর মেরে দিন।

২য় পক্ষঃ আহা, বললেই যেন হলো! আর জনসাধারণ নেই এজলাসে? তাদেরও জিজ্ঞাসা করা হোক। মতামত নেওয়া হোক, হুজুর।

বিচারপতিঃ অস্থির হবেন না। আমার ওপর ভরসা রাখুন। আদালতের ওপর ভরসা করতে শিখুন। হ্যাঁ, হ্যাঁ, আপনি কিছু বলবেন? বলুন।

৩য় সাধারণঃ বাইরে তো বলতে দেয় না স্যার। এখানে বলি, ওই ২য় পক্ষ। 

৪র্থ সাধারণঃ কাউকেই না স্যার।

বিচারপতিঃ মানে নোটায় টিপলেন।

১ম পক্ষঃ আহারে, ৩য় পক্ষের কেউ নেই। স্যার, নোটাই যখন বলছেন, তাহলে যোগ করলে নীলকণ্ঠই দাঁড়ায়। আদালত আপনার ঘোষণা শোনার অপেক্ষায়। 

বিচারপতিঃ সবুর করুন। এখানে সংখ্যায় বিচার করা হয় না। 

১ম পক্ষঃ সে কী বলছেন স্যার! আপনার ওপরের ওপরের ওপরে সংখ্যাবিচারে হয়, এখানে হবে না? বাবরি চুল ছেঁটে রামকেশ গড়ে উঠছে স্যার, আর নীলে নীলে নীলকণ্ঠ হবে না? না-হলে সাধারণ মানুষ খেপে গেলে সমস্তটাই বিগড়ে যাবে। তার দায় কে নেবে হুজুর!

২য় পক্ষঃ হুমকি দিচ্ছে স্যার! আদালত অবমাননার দায়ে ফেলতে হবে।

৩য় পক্ষঃ এতদিন বাইরে হুমকি দিত সর্বত্র, পাড়া টু পুলিশ। এখন আদালতকেও জনগণের ক্ষিপ্ততার কথা বলছে স্যার। কোন সাধারণের আর বুকের পাটা থাকে, বিরুদ্ধে কিছু বলার! আপনি স্যার, সিকিউরিটির ব্যবস্থা করুন। কখন কী ঘটে যায় কিচ্ছু বলা যায় না। 

বিচারপতিঃ অর্ডার, অর্ডার। আইনের শাসন বলবৎ থাকবে, আমি নিশ্চিত। হ্যাঁ, সাধারণ থেকে কে একজন বলতে চেয়েছিলেন? বলুন, বলুন। 

৫ম সাধারণঃ আমি বলতে চাই স্যার। আমার এবং সত্যি বলতে কী আমাদের একটি পক্ষ আছে। আজ অন্য কেউ আসতে পারেনি, আমিই তার প্রতিনিধি। আমাকে কিছু বলতে দিতে হবে।

বিচারপতিঃ যা ব্বাবা! আরও একটি পক্ষের দাবি? একাই একটা পক্ষ! নিশ্চয়ই পক্ষ হওয়ার মতো যোগ্যতা আপনারা অর্জন করতে পারেননি এ-রাজ্যে। পারলে তো, ৪র্থ-পক্ষ হয়ে লড়তে পারতেন। আচ্ছা, পক্ষ হয়ে লড়ার শর্ত-গুলি যেন কী-কী ছিল? 

১ম পক্ষঃ আসল যেটা, সেটা হচ্ছে পৌনে ছ-পার্সেন্ট ভোট পাওয়া। 

৫ম সাধারণঃ হুজুর, এটা ঠিক যে আমরা পৌনে-ছ শতাংশ ভোট পাইনি। কিন্তু সোয়াপাঁচ শতাংশ ভোট ক্রাইটেরিয়া রাখলে আমরা ৪র্থ পক্ষ হয়ে যেতে পারতাম নিঃসন্দেহে। একটা শতাব্দী-প্রাচীন বটঝুরি দল আমরা। আমরা জাতীয় দল। অথচ কায়দা করে আমাদের বাইরে রাখা হয়েছে। সে যাক, আমাদের কথা হচ্ছে এই যে পাখির নামে মাসের নাম রাখার ব্যাপার-স্যাপার, এসবই মূল ইস্যু থেকে মানুষের নজর ঘুরিয়ে রাখার ব্যাবস্থা বা প্রকল্প। পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে যত খরচ করা যায়, ততই ওদের লাভ, তত গুড়। এভাবে এই সরকারি দল সবকিছুতেই নিজেদের অধিকার কায়েম করতে চায়। 

বিচারপতিঃ অর্ডার, অর্ডার। এত কথার এখানে কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি পরোক্ষভাবে আদালত অবমাননা করছেন। আদালতের কার্যক্রম অনুসারে আপনি সরাসরি প্রস্তাবকদের নাম করা পাখির নামকে হয় সমর্থন করুন, নয় বিরোধিতা করুন, নয় নিজে কোনো নাম প্রস্তাব করুন। এ পর্যন্ত সইব। তার বাইরে গেলে, আদালত থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ দিতে বা্ধ্য হব। নিন বলুন।

১ম পক্ষঃ ঠিক, ঠিক। উপযুক্ত চেতাবনি।

২য় পক্ষঃ ঠিক, ঠিক। যাকে বলে তোফা সিদ্ধান্ত।

৩য় পক্ষঃ স্যার ওদের বলতে দিন। বার করে দেওয়া সোজা, ধরে রাখা কঠিন।

বিচারপতিঃ অর্ডার, অর্ডার। বলুন আপনি। সংক্ষেপে এবং নির্দিষ্ট করে।

৫ম সাধারণঃ পাখি তো কতই আছে বাংলায়। মাসও বারোটা। তবু পাখির নামে আকাল। যেমন আকাল সবকিছু। বারোটা মাস নয়, বারোটা ‘ফুল্লরার বারমাস্যা’। 

বিচারপতিঃ নিন নিন! আর হ্যাজাবেন না। বলতে দিয়েছি, তাই যথেষ্ট। পাখির নাম বলুন। জল ঘোলা করে লাভ কিছু হবে না।

৫ম সাধারণঃ পাখি তো কতই আছে বাংলায়! তারা সব গান করে কই, কই নাচে লেজটি নাড়িয়ে। সুখ নাই তাদের মনে, খাবার নেই তাদের দেহে, জলা নেই, অরণ্য অপ্রতুল। 

বিচারপতিঃ আর ৩ সেকেণ্ড সময় বরাদ্দ। নইলে এজলাসের বাইরে বসে ঘুগনি খান গিয়ে।

৫ম সাধারণঃ পাখি তো কতই আছে বাংলায়। এখানে অনুচ্চারিত। কুবো, ঘুঘু, দুর্গা টুনটুনি। ডাহুক, হরিয়াল, কাঠঠোকরা। চড়ুই, শ্যামা, ফিঙে আর লক্ষ্মীপ্যাঁচা। বসন্তবৌরি, চাতক, হাঁড়িচাচা, তিতির, আর ধনেশ। বউ কথা কও, বাজ, বাবুই, বেনেবউ, মুনিয়া, আর ঈগল। এত বড়ো পাখিটার নাম কেউ উচ্চারণই করলে না গো!  

বিচারপতিঃ আপনি কার নাম বলতে চাইছেন, সেটা বলুন। না-বললে বেরিয়ে যেতে পারেন। রামায়ন গাওয়ার দরকার নেই। 

৫ম সাধারণঃ কোনটা ছেড়ে কোনটা যে বলি! ‘পাখি সব করে রব/ রাতি না-পোহাইল’…

বিচারপতিঃ আপনাকে আদালত চত্বরের বাইরে যাওয়ার নির্দেশ জারি করছি, এই মুহূর্তে। সেন্ট্রি…

৫ম সাধারণঃ সেন্ট্রির দরকার নেই হুজুর। আমি বেরিয়েই যাচ্ছি। বেরিয়ে তো যেতেই হবে, জানতাম। কিন্তু স্যার, এক বছরে পাঁচ বছরের ধার্য কাজের যদি ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ কাজ শেষ করা যেতে পারে, তবে একটাই মাত্র চান্সে কেন ৯৯ টা পাখির নাম বলা যাবে না বলতে পারেন? আমি তো মাত্র কয়েকটা…

(এজলাসে গুঞ্জন। তারচেয়ে বেশি সরগোল বাইরে, যার শব্দ বন্ধ দরজা-জানলা ভেদ করে ঢুকে পড়ছে। ৫ম সাধারণ বেরিয়ে যাওয়ার সময় দরজা খোলায় সেই আওয়াজ যেন একটা ট্রেন চালিয়ে দিয়ে আবার স্তিমিত হয়ে আসে)

বিচারপতিঃ এনাফ ইজ এনাফ। এই শ্রাবণ মাস নিয়ে যথেষ্ট হয়েছে। সবদিক বিচার বিবেচনা করে, দু-মিনিটের মধ্যে আমি আমার রায় ঘোষণা করছি।

১ম পক্ষঃ তা করুন স্যার। নীলকণ্ঠ আর বাইরের গোলযোগটা একটু কনসিডারেশনে রাখবেন স্যার। সাদা যাইহোক হয়েছে, নীল না-হলে…

২য় পক্ষঃ ধমকাচ্ছে স্যার। 

৩য় পক্ষঃ যুক্তিহীনের বাহুবল। টলে যাবেন না স্যার।

১ম সাধারণঃ নীল চাই নীল।

২য় সাধারণঃ চাই চাই, চাই-ই চাই। 

১ম পক্ষঃ এখন আর দেরি নয়—

বিচারপতিঃ দীর্ঘ আলোচনার পর, সবার সব প্রস্তাব এবং তার সমর্থন ও বিরোধিতা নজরে রেখে, শ্রাবণ মাসের কথা চিন্তা করে, আমি এই সিদ্ধান্তে এসেছি, যে এই মাসের নামে পাখিটির নাম হোক— ‘চাতক’। ওই যে বলে না— ‘চাতক বারি যাচে রে’।

(মুহূর্তে বাইরে দমাদম বোমের আওয়াজ। সব কটা দরজা খুলে অনেক মাসলম্যানের অশ্রাব্য গালিগালাজসহ প্রবেশ। ফাঁকায় একটা বোম চার্জও হয়ে গেল। ‘অর্ডার, অর্ডার’ হাতুড়ি পিটতে পিটতে বিচারক টেবিলের নীচে। লোকজন বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পড়িমড়ি। চিৎকার-চেঁচামেচি, হৈ-হল্লা। তাকে ছাপিয়ে ১ম পক্ষের লোকজনের আর্ত চিৎকার— ‘ওরে আমাদের অন্তত বেরোতে দে। আর চার্জ করিস নে’। কে শোনে কার কথা, উন্মত্ত টলমলেরা, কিল-চড়-ঘুষি, যাকে-তাকে, যত্রতত্র। কেউ কেতরে পড়ে গেল, কেউ হাতজোড় করছে, কেউ পায়ে পড়ে যাচ্ছে, কেউ বলছে— ‘এবারের মতো ছেড়ে দাও, জীবনে আর কোনোদিন…’, প্রায় আধঘন্টা জুড়ে তাণ্ডব। ফলশ্রুতি— একজনের হাত ভেঙেছে, দুজনের মাথা ফেটে গলগল, তিনজন পড়ে আছে মেঝেয়, চারজন হাত তুলে স্থির। বিচারপতি টেবিলের নীচ থেকে বলে চলেছেনঃ এটা আদালত, ‘পরীক্ষা প্রার্থনীয় আদালত’। আদালত অপমানিত হচ্ছে। করবেন না, করবেন না। আইন ক্ষমা করবে না। বন্দুক লা-আও, সড়কি লা-আও। কেউ এক জন বলে ঊঠল— শালা, ঢ্যামনা। আদালত তোর গাঁড়ে ঢুকিয়ে দেব। আরেকজনঃ শ্লা, চোখে নীল সেঁধোয় না, না? চাতক; বেজম্মা কোথাকার। এই লে, বলে একটা নীল পেপার-ওয়েট ধা করে ছুড়ল বিচারকের টেবিলের নীচটা লক্ষ্য করে। ব্যর্থ হলো, হাত ঠিক চলছিল না; কাল রাতের শেষ পর্যন্ত টানা বোধহয় হাতের সঙ্গে বেইমানি করেছে। বিশাল পুলিশ বাহিনী ঢোকার আগেই হল্লাকারীরা চম্পট। একজন পুলিশ অফিসার— বেরিয়ে আসুন স্যার। আমরা এসে গেছি। ভয় পাবেন না, স্যার। আমরা সব দেখে নিচ্ছি। আপনি আবার শুরু করতে পারেন। উঠে এসে বিচারক নির্বাক। হাত-তোলা চারজন তাদের হাত নামিয়েছেন। কেতরে পড়া লোকজন আর মাথা-গলগলরা অ্যাম্বুলেন্সের প্রতীক্ষায়। হ্যাঁ, ওই যে হুটারের শব্দ শোনা যাচ্ছে। ছেঁড়া কাগজপত্র আর আধলা থেকে সিকি ছড়িয়ে ছিটিয়ে সর্বত্র। মেঝের কয়েকটা জায়গা হলুদ আভায় গর্ত হয়েছে। ভাঙা বেঞ্চ দুটো উলটে, একটা হাফ-ভাঙা টেবিল তাদের চুমু। একজন মাথায় লাল-ফেট্টি বাঁধা ঝাড়ুদার নিঃশব্দে। একজন চাপরাশি এক গ্লাস জল নিয়ে এল বিচারকের জন্য। আদালতের কর্মীরা দাবি তুলল— এই পরিবেশে তারা আর কাজ করবে না। পুলিশ অফিসার তাদের বোঝাতে ব্যস্ত— অপরাধিরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধরা পড়বে। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে চার্জশিট। আর ১৪ দিনে কঠিন শাস্তি। এই প্রথম বিচারক কথা বললেনঃ আবার শাস্তি!)

বিচারপতিঃ আমি ‘পরীক্ষা প্রার্থনীয় আদালত’-এর সমস্ত কার্যক্রম অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করছি। ওরে কেউ ‘জনগণ মন অধিনায়কটা’ চালিয়ে দে রে!

(না, তারজন্য কোনো মানুষ সেখানে মজুত ছিল না। শুধু কিছু গোঙানির শব্দ তখনও…)



 



পাঠকের মতামতঃ